রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
এইচ,এম হুমায়ুন কবির, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)।।
মরণঘাতি মহামারি করোনার প্রভাব পড়ছে অর্থনীতির উপর। অর্থনৈতিক সংকটের ফলে দু’মুঠো ভাত ও বস্ত্রের জন্য পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে উপকূলীয় অঞ্চলের শিশুরা দিন দিন ঝুঁকে পড়ছে শিশুশ্রমে।
শিশু বেলার এ সময়টা শিক্ষার আলোতে আলোকিত হওয়ার কথা ছিলো ওদের। কিন্তু তারা এখন কর্মব্যস্ত শুটকি পল্লীতে। ওদের কাঁধেও সংসারের অভাব অনটনের বোঝা। দারিদ্রের কষাঘাতে অনিশ্চয়তার মধ্যে ওদের শৈশব। শিশুশ্রমের বেড়াজালে বন্দিজীবন কাটে উপকূলের হাজারো শিশুর। প্রকৃত পক্ষে উপকূলে এখনও অবিরাম গতিতে চলছে শিশু শ্রম।
মহামারি করোনা ভাইরাসের ফলে উপকূলীয় অঞ্চল কুয়াকাটায় প্রতিনিয়ত শিশু শ্রমে যুক্ত হওয়া ও বাল্য বিবাহের প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়ে প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে শিশুদের ভবিষ্যৎ। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি সহ অনিশ্চয়তার মধ্যে শিশুদের জীবন। করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, খেলাধুলায় অংশগ্রহণ না করা, অপরদিকে পরিবারের আর্থিক সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানকার হতদরিদ্র শিশুরা যুক্ত হচ্ছে শিশু শ্রমে। এমনকি এসব কারণে আশংকাজনক হারে বাড়ছে বাল্যবিবাহ।
কুয়াকাটার পাঞ্জুপাড়ার শিশু শ্রমিক মেহেদি হাসান (১২) ‘দৈনিক ১০-১২ ঘন্টা কাজ করে মাছ শুকানোর কাজে। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ রোদে শুকানো, নৌকা থেকে মাছ তোলা, মাছ কাটা থেকে শুরু করে সব কাজ করতে হয় তাকে। বিনিময় মিলছে সামান্যতম তেমন ভাতা। বেতনের কথা জিজ্ঞেস করলে সে বলে ৩০০-৩৫০ টাকা পাই। এবয়সে কেন কাজ করছ ? জানতে চাইলে সে আরও বলে, পেটের দায়ে কাজ করতে আসছি। মেহেদীর মত অনেক শিশু শ্রমিক রয়েছে যারা এ শুটকি পল্লীতে কাজ করছে।
এদিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বলতে কোন কিছুই বোঝেনা এ শুটকি পল্লীতে কাজ করা শিশুরা। এসব শিশুরা বেড়ে উঠছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। ফলে দিন দিন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে এ শুটকি পল্লীতে কর্মরত শিশুরা। মাছ শুকানো, মাছ কাটা, মাছ প্যাকেট করাই এদের কাজ। অধিকাংশ শিশুরা অস্থায়ীভাবে তোলা ঘরেই রাত্রি যাপন করে।
গোড়াখালের শুটকি পল্লীতে কথা হয় মো.সুমন (১৩) নামের এক শিশু শ্রমিকের সাথে। সুমন জানায়, ‘ঘরে থাইক্কা যে মোরা ল্যাহা পড়া হরমু (করমু) হেইয়া মোগো কপালে নাই। মোগো ঘরে ভাত নাই। তাই বদলা (শ্রমিক) দিয়ে ৩০০-৩৫০ টাকা পাই তা দিয়ে ঘরে চাউল কিনি’। সুমনের মতো হাজারও শিশুর স্বপ্নগুলো এভাবেই নষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কোন জেলেদের মুখে মাস্ক নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জেলেরা ট্রলার ভর্তি মাছ নিয়ে আসে এখানে। থাকার পরিবেশের অবস্থা শোচনীয়। শুটকি পল্লীর জেলেদের সঙ্গে থাকা ২-৩ বছররে বাচ্চাগুলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে উঠছে। এদিকে শুটকি পল্লী ছাড়াও বিভিন্ন হোটেল রেঁস্তোরায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত থাকতে দেখা যায় এ অঞ্চলের শিশুদের।
উপকূলীয় মানব উন্নয়ন সংস্থা (সিকোডা)’র চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন মিরাজ মুসুল্লী বলেন, “জাতীয় শিশুশ্রম নীতি অনুসারে শিশুশ্রমের কারণ অনুসন্ধান, এর পেছনে আর্থ সামাজিক কারণগুলো খোঁজা, শিশুর মৌলিক চাহিদা পূরণের ঘাটতি কোথায় তা নির্ণয় করে সরকারের পাশাপাশি সেেচতন মহলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা স্থানীয় সংগঠন রুরাল ইনহ্যান্সমেন্ট অর্গানাইজেশন (রিও)’র সভাপতি মাওলানা হাবীবুল্লাহ জানান, অর্থসংকটরে সময় অনেক পরিবারই খাদ্য যোগানের জন্য শিশুদেরকেও কাজে লাগিয়ে দেয়। আমাদের উচিত শিশুদেরকে শ্রমে না লাগানো।
কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল হক জানান, মহামারীর সময় স্কুল বন্ধ থাকায় শিশু শ্রম ও বাল্য বিবাহ বেড়েগেছে। শিশু শ্রম বন্ধ ও বাল্যবিবাহ রোধে আমরা সচেষ্ট আছি।